গ্রেফতারের ৭০ শতাংশেরই রয়েছে মাদক সংশ্লিষ্টতা

Date:

Share post:

মাদকের ভয়াল ছোবলে বাড়ছে নানা মাত্রার অপরাধ। যুবক-যুবতী থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরীরাও মাদকাসক্ত হয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকের অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। কিশোর গ্যাং-দের বেশিরভাগই মাদকে আসক্ত। এখন মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে খুন হচ্ছেন বাবা-মা, ভাই বোন ও সহপাঠী।

র‌্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি দেশে মোট গ্রেফতার হওয়াদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখে যে, আইন -শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশেরই রয়েছে মাদকে সংশ্লিষ্টতা। অর্থাৎ সারাদেশে প্রতিবছর যত সামাজিক অপরাধ হয় তার ৭০ ভাগই হচ্ছে মাদকের কারণে। বর্তমানে যারা কারাগারে কয়েদি আছেন তাদের ৬০ থেকে ৭০ ভাগই মাদক সম্পৃক্ত।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের অধিকাংশ অপরাধের মূলে রয়েছে মাদক। তাই মাদক নির্মূল করতেই হবে। এক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। পাড়া-মহল্লাসহ সারাদেশে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে মাদক যাতে দেশে না আসতে পারে সেজন্য সীমান্তসহ প্রবেশ পথগুলোতে সিলগালা করে দিতে হবে। ইয়াবার সিংহভাগই আসে মিয়ানমার থেকে। টেকনাফ দিয়ে দেশে প্রবেশ করে। এছাড়া পার্বত্যঞ্চলে সীমান্তবর্তী ২৫ কিলোমিটার রাস্তা অরক্ষিত। এই পথে বিনা বাধায় নিয়মিত মাদকসহ অস্ত্রের চালান আসছে। বিভিন্ন সীমান্ত দিয়েও প্রতিদিন মাদক দেশে প্রবেশ করছে। তাই মাদককে সমূলে উৎপাটন করতে হবে। এক্ষেত্রে সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মাদকাসক্ত হয়ে অনেকে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে। পল্লবীতে অতিসম্প্রতি দুই তরুণ এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে স্ত্রী-সন্তান ও প্রতিবেশীদের সামনে কুপিয়ে হত্যা করে হেঁটে চলে যায়। তারাও এলাকায় মাদকাসক্ত তরুণ হিসেবে চিহ্নিত অপরাধী। বর্তমানে কিশোর অপরাধীরা মাদকের কারণে এতটাই বেপরোয়া তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওরা প্রতিপক্ষের ওপর নির্মমভাবে হামলা করছে। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে বীরদর্পে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে।

পাড়া-মহল্লায় গ্রুপ বেঁধে চলাফেরা করে ওরা। গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডায় লিপ্ত থাকে। স্কুল-কলেজের মেয়েদের দেখলেই নানাভাবে হয়রানি করে। তাদের বিরুদ্ধে এলাকার লোকজন কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি না থাকায় তারা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, এককভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে দেশকে মাদকমুক্ত করা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা ও মাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষের সোচ্চার অবস্থান। সচেতনতার এই কাজটি শুরু করতে হবে নিজ পরিবার থেকেই। তা হলেই পরবর্তী সময়ে এটি একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ নেবে।

পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, বর্তমানে গ্রেফতার হওয়াদের সিংহভাগই হলো মাদকে সংশ্লিষ্টতা। প্রায় ৭০ ভাগই কোনো না কোনোভাবে মাদকে সম্পৃক্ত। এই মাদক খুবই থ্রেড আমাদের জন্য। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, মাদক বাংলাদেশে তৈরি হয় না। পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে মাদক উৎপাদন হয়। আর আমাদের দেশে মাদক প্রবেশ করে সীমান্ত দিয়ে এবং নৌপথ, স্থলপথ ও আকাশ পথে। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও আসে। মাদকের সকল প্রবেশ পথ বন্ধ করে দিতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।

র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগেরই রয়েছে মাদকে সংশ্লিষ্টতা। মাদকাসক্তদের গ্রেফতার করার সুফল পাওয়া যাচ্ছে। একটা বার্তা চলে গেছে যে, কেউ অপরাধ করে পার পাবে না। তিনি বলেন, শিক্ষিত তরুণরা এখন বেশি মাদকে আসক্ত হচ্ছে। মাদকের কারণে অপরাধও বাড়ছে। তাই মাদককে সমূলে নির্মূল করতে হবে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা বলেন, সমাজের জন্য এখন বড় থ্রেড মাদক।