স্বাধীন বাংলার পতাকা সব ভবনের শীর্ষে

Date:

Share post:

স্বাধীন বাংলাদেশের দাবিতে অবিচল সর্বস্তরের মানুষ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ অনুযায়ী সরকারের সঙ্গে তারা সব ধরনের অসহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন।

বঙ্গবন্ধু আহূত অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে শরিক হয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি ও প্রশাসনের সচিবসহ সারা বাংলায় সরকারি, আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের কর্মচারী অফিস বর্জন করেন। ১৯৭১ সালের ১১ মার্চ সচিবালয়, মুখ্যসচিব ও প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ সব সরকারি ও আধাসরকারি ভবন এবং বাড়ির শীর্ষে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ানো হয়। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর প্রশাসনিক কাজে যেন বাঙালিরা সহায়তা না করে। ৭ মার্চের ভাষণেও সেটা তিনি বলেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বান পুরোপুরি কার্যকর হয় মাত্র পাঁচ দিনের মাথায়ই। বন্ধ করে দেওয়া হয় সরকারি ও আধাসরকারি প্রায় সব কার্যালয়। আদালত থেকে শুরু করে অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তাই স্বাধীনতার এই ডাকে সারা দিয়ে কর্মস্থল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বের হয়ে যান।

এদিন টাঙ্গাইলে বিন্দুবাসিনী হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় ন্যাপপ্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বঙ্গবন্ধু ঘোষিত স্বাধীনতাসংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান সাত কোটি বাঙালির নেতা। নেতার নির্দেশ পালন করুন। লক্ষ্য অর্জনের জন্য সবাই একজোট হয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করুন। এ মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনোরকম বিরোধ থাকা উচিত নয়। জনগণ এখন নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

ন্যাপ (ওয়ালী) পূর্ববাংলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, পাঞ্জাব আওয়ামী লীগ সভাপতি এম খুরশীদ, কাউন্সিল মুসলিম লীগপ্রধান খান মমতাজ দৌলতানার বিশেষ দূত পীর সাইফুদ্দিন ও ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি কে উলফ আজকের এই দিনে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।

সংগ্রামী জনতা সেনাবাহিনীর রসদ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর স্বাভাবিক সরবরাহের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে। সিলেটে রেশন নেওয়ার সময় সেনাবাহিনীর একটি কনভয়কে বাধা দেওয়া হয়। যশোরেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে।

রাতে সামরিক কর্তৃপক্ষ ১১৪ নম্বর সামরিক আদেশ জারি করে নির্দেশ দেয় যে, কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করলে বা সশস্ত্র বাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ বা সেনাবাহিনীর গতিবিধিতে অন্তরায় সৃষ্টি করলে তাদের কার্যকলাপ আক্রমণাত্মক কাজের শামিল বলে গণ্য হবে, যা সামরিক বিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

একাত্তরের এই দিনে পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে গণঐক্য আন্দোলনের নেতা এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, খুব দ্রুত পটপরিবর্তন হচ্ছে। দেশকে বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে শিগগিরই ব্যবস্থা নিতে হবে। আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমানই কার্যত এখন ঢাকার সরকার। তিনি আরও বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে অবিলম্বে ক্ষমতা ছাড়া না হলে দেশের দুই অংশকে এক রাখা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।

এদিন, পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে তারবার্তা পাঠান। তারবার্তায় তিনি বলেন, উদ্ভূত সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। আমরা আজ বিরাট সংকটের মুখোমুখি। দেশের ভবিষ্যৎ আজ অনিশ্চিত। এ ব্যাপারে আমাদের উভয়ের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। ধ্বংস এড়ানোর জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই আমাদের করতে হবে। যে কোনো মূল্যের বিনিময়ে দেশকে রক্ষা করতে হবে।

এদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যবসায়ীরা ইয়াহিয়াকে একটি বার্তা দেন যে, অবিলম্বে সমস্যার প্রতিকার না করা গেলে পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিউজপ্রিন্টের অভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের সংবাদপত্রের কলেবর হ্রাস পেয়েছে। করাচি, ডনসহ পশ্চিম পাকিস্তানের পত্রিকাগুলোর কলেবর ১৪ পৃষ্ঠার পরিবর্তে মাত্র ৪ পৃষ্ঠা ছাপা হচ্ছে। এসব পত্রিকা খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের কাগজ ব্যবহার করে। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে চালান বন্ধ করা হয়।