মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ডলারের দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে পেশাগত আচরণ করেনি।
উলটো তারা সংকটকে কাজে লাগিয়ে একদিকে বাড়তি মুনাফার চেষ্টা করেছে, অন্যদিকে হুহু করে বাড়িয়েছে ডলারের দাম। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো নিয়ম-কানুনের কোনো তোয়াক্কাই করেনি। কম দামে ডলার কিনে বেশি দামে বিক্রি করেছে।
আন্তঃব্যাংকে ডলার বিক্রি না করে করপোরেট লেনদেনের নামে চড়া দামে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিকে বৃহস্পতিবার রিজার্ভ আবার বেড়ে ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে উঠেছে।
বৃহস্পতিবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলারের দাম আগের মতোই ছিল। তবে কিছু ব্যাংকে নগদ ডলারের দাম সামান্য বেড়েছে। আমদানিতে ডলারের জোগান ক্ষেত্রে আগের দামই রয়েছে। তবে কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে ডলারের দাম প্রায় ৮ টাকা কমেছে। গত বুধবার কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ১০৪ টাকা পর্যন্ত ওঠে। বৃহস্পতিবার তা কমে ৯৬ টাকায় নেমে আসে।
কার্ব মার্কেটে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নজরদারি বাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া প্রবাসীরা যেসব ডলার বিদেশ থেকে নগদ নিয়ে আসেন সেগুলোকে ব্যাংকমুখী করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যে কারণে কার্ব মার্কেটে ডলারের জোগান ও চাহিদা দুটোই কমেছে। কার্ব মার্কেট থেকে বেআইনিভাবে যারা ডলার কিনে মজুত করেছেন তাদের সম্পর্কেও খোঁজখরব নেওয়া হচ্ছে।
আন্তঃব্যাংকে বৃহস্পতিবার প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ৮৭ টাকা ৬০ পয়সা দরে বেচাকেনা হয়েছে। আমদানির জন্য ৮৭ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৮৯ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে নগদ ডলারের চাহিদা বেশি। এ কারণে ব্যাংকগুলোতে ৯১ থেকে ৯৭ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে।
সূত্র জানায়, করোনার পর হঠাৎ করে চাহিদা বাড়ায় গত আগস্ট থেকেই পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে আমদানি ব্যয়। গত আগস্টে এক মাসেই আমদানি ব্যয় বেড়েছিল ৬৩ শতাংশ। জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। একই সময়ে এলসি খোলা বেড়েছে ৫০ শতাংশ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনার সময়ে স্থগিত এলসি ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ।
এ কারণে ডলারের দাম হঠাৎ করেই বাড়তে থাকে। বাজারে চাহিদা থাকায় চলতি বছরের সাড়ে চার মাসে ডলারের দাম চার দফায় ১ টাকা ৫০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বেড়েছে আরও বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যেসব ব্যাংক ডলার কিনবে তারা শুধু নিজেদের প্রয়োজনেই ব্যবহার করবে। অন্য ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে পারবে না। কিন্তু এবার অন্য ব্যাংকের কাছে চড়া দামে বিক্রি করার তথ্য পাওয়া গেছে। আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজার থেকে ডলার কিনে তা চড়া দামে করপোরেট লেনদেনের নামে আগাম বিক্রি করার ঘটনাও ঘটেছে। নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংক যে দামে ডলার কিনবে তার চেয়ে ৫ পয়সা বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে।