ব্রিটিশ রাজতন্ত্র থেকে রাজপরিবারে উত্তরণের কারিগর

Date:

Share post:

মাত্র ২৫ বছর বয়সে ব্রিটিশ রাজত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। যুক্তরাজ্যে তাঁর মতো দীর্ঘ সময় সিংহাসনে আসীন থাকার ইতিহাস আর কারও নেই।

তাঁর মৃত্যুতে একটি যুগের অবসান হলো ব্রিটিশ রাজ পরিবারে। হাজার বছরের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে রাজা-রানি এসেছে অনেক, তবে তাদের মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্ম ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল লন্ডনের মেফেয়ার এলাকার বাড়িতে। পুরো নাম, এলিজাবেথ আলেকজান্ড্রা মেরি উইন্ডসর।

তাঁর বাবা অ্যালবার্ট, ডিউক অফ ইয়র্ক এবং মা সাবেক লেডি এলিজাবেথ বোওজ-লিওন-এর তিনি ছিলেন প্রথম সন্তান। অ্যালবার্ট ছিলেন পঞ্চম জর্জের দ্বিতীয় সন্তান।

এলিজাবেথ এবং তাঁর বোন মার্গারেট রোজ দুজনেই লেখাপড়া শিখেছেন বাড়িতে। মার্গারেটের জন্ম হয় ১৯৩০ সালে। পরিবারের ভালবাসার আবহে বেড়ে উঠেছিলেন দুই বোন।

প্রাতিষ্ঠানিক স্কুলে শিক্ষা না পেলেও ভাষার প্রতি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ভাল দখল ছিল, তিনি সাংবিধানিক ইতিহাস পড়েছিলেন বিস্তারিতভাবে।

এলিজাবেথের সিংহাসনে বসার পথ খোলে চাচা রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড রাজদণ্ড ছেড়ে দেয়ার পর। ১৯৩৬ সালে অষ্টম এডওয়ার্ড পদত্যাগ করলে এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ রাজা হন।

ষষ্ঠ জর্জ যখন ব্রিটেনের রাজা হন এবং ১০ বছর বয়সী ‘লিলিবেট’, যে নামে তাকে পরিবারের মধ্যে ডাকা হতো, তিনি হন ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী।

বয়স ১৮ পেরোনোর পর এলিজাবেথ পাঁচ মাসের মতো অক্সিলিয়ারি টেরিটোরিয়াল সার্ভিসে কাজ করেন এবং মোটর মেকানিক ও ড্রাইভিংয়ের দক্ষতা অর্জন করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় গ্রিসের রাজপুত্র ফিলিপের সাথে প্রণয় হয় এলিজাবেথের। ফিলিপ তখন ব্রিটেনের রাজকীয় নৌবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন।

তাদের মধ্যে প্রেম বাড়তে থাকে এবং ১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবি গির্জায় তারা বিয়ে করেন। এই বিয়ের সুবাদে প্রিন্স ফিলিপ ডিউক অফ এডিনবরা উপাধি লাভ করেন।

প্রিন্স ফিলিপকে বিয়ে করতে চাইলে এলিজাবেথকে বেশ বাধার মুখে পড়তে হয়। বিদেশি বংশ পরিচয়ের কারণে তাঁর বাবা ফিলিপের হাতে মেয়েকে তুলে দিতে রাজি হননি।

১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর জন্ম হয় প্রথম সন্তান চার্লসের। এরপর প্রিন্সেস অ্যান ১৯৫০ সালে, প্রিন্স অ্যান্ড্রু ১৯৬০ সালে এবং প্রিন্স এডওয়ার্ড ১৯৬৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৫২ সালে এলিজাবেথ যখন কেনিয়া সফর করছিলেন তখন প্রিন্স ফিলিপ তাকে তার বাবার মৃত্যুর খবর দেন। ব্রিটেনের নতুন রানী হিসাবে তিনি দ্রুত লন্ডনে ফিরে আসেন।

১৯৫৩ সালের ২ জুন রাজকুমারী এলিজাবেথকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবি গির্জায় ব্রিটেনের রানির মুকুট পরানো হয়েছিল। দুই কোটিরও বেশি টিভি দর্শক এই অনুষ্ঠান দেখেছিলেন।

সিংহাসনে বসার পর রানি এলিজাবেথকে দেখতে হয়েছে কঠিন সব সময়। বিদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অবসান এবং ‘সুইংগিং সিক্সটিজ’ নামে পরিচিত ষাটের দশক দেখেছেন তিনি।

চলতি বছরেই রানির সিংহাসনে বসার ৭০ বছর পূর্তি হয়েছে। উৎসব হলেও ঔজ্জ্বল্য ছিলো না তাতে। কারণ গত বছরই তাঁকে ছেড়ে গেছেন স্বামী প্রিন্স ফিলিপ।

২০২১‌ সালে ৯৯ বছর বয়সী প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যু পর্যন্ত ৭৪-বছরের বিবাহিত জীবনে রানি এলিজাবেথ তাকে ‘আমার শক্তি এবং নির্ভরতা’ হিসাবে বর্ণনা করেন।

আর চলতি বছরের জুন মাসে মহা সমারোহে উদযাপিত হয়েছে রানির সিংহাসন আরোহণের ৭০তম বার্ষিকী বা প্লাটিনাম জয়ন্তী।

রাজপরিবারের সম্মান ধরে রাখতে সারাজীবন সচেষ্ট ছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে দ্রুতগামী পৃথিবীর সঙ্গে টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।