নীলফামারী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা আট। কিন্তু এর বিপরীতে চার জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে চলছে কেন্দ্রটি। বাকি চার পদই শূন্য। ফলে মাতৃকালীন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
শূন্য চার পদের মধ্যে মেডিক্যাল অফিসার (এমসিএইচ-এফপি, অ্যানেসথেসিয়া) একজন, ভিজিটর দুই জন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী একজন। আর কর্মরত চার জনের মধ্যে একজন মেডিক্যাল অফিসার (ক্লিনিক্যাল), দুই জন ভিজিটর ও একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছেন।
ওই কেন্দ্রে ২০ শয্যার ওয়ার্ডে সিজারের জন্য রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। কিন্তু চিকিৎসক সংকটে সেটির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকার গর্ভবতী মায়েরা। অজ্ঞান (অ্যানেসথেসিয়া) করার চিকিৎসক না থাকায় সদর উপজেলার প্রায় চার লাখ মাতৃকালীন রোগী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার (ক্লিনিক্যাল) ডা. রোকসানা বেগম বলেন, ‘২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক পদটি শুন্য হয়। তখন থেকে গর্ভবতী মায়েদের সিজার বন্ধ আছে। এরমধ্যে ডেপুটেশনে দু-একজন চিকিৎসক এলেও তারা বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তিন বছরের বেশি সময় থেকে অজ্ঞান করার চিকিৎসক নেই। এই চিকিৎসক না থাকায় প্রতিদিন চার-পাঁচ জন গর্ভবতী মাকে সিজারের জন্য বাইরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যেতে হয়। পাশাপাশি অকেজো হয়ে পড়ে আছে সিজারের মূল্যবান যন্ত্রপাতি। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ রোগীর স্বজনরা। অপরদিকে, লাভবান হচ্ছেন বেসরকারি ক্লিনিকের মালিকরা।’
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সরেজমিনে জানা গেছে, পুরো হাসপাতাল উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। ক্লিনিকে আনসার (ভিডিপি) ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে।
সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের বাহালীপাড়া গ্রামের রোজিনা বেগম (২৪) জানান, গত ১১ অক্টোবর ডাক্তারের আল্ট্রাসনোগ্রাম রির্পোট অনুযায়ী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সিজারের জন্য গেলে কর্তব্যরত ভিজিটর জানান, এখানে সিজার হয় না। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে অজ্ঞান করার চিকিৎসক নেই।’
একই উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের দীঘলটারী গ্রামের গর্ভবতী শরিফা বেগম (৩০) বলেন, ‘আমাকে চলতি সপ্তাহে সিজারের দিন তারিখ জানিয়েছে ডাক্তার। সে অনুযায়ী দুই দিন আগেই প্রস্ততি নিয়ে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে আসি। কিন্ত এখানে এসে জানতে পারি, সিজার হয় না।’ এর কারণ জানতে চাইলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, ‘অজ্ঞান করার চিকিৎসক নেই। তাই সিজার বাইরে করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। টাকা না থাকায় সরকারি সেবা নিতে আসি। কিন্ত এখানে নাকি তিন বছর ধরে সিজার হয় না। এতো বড় হাসপাতাল অথচ চিকিৎসক নেই।’
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রোখসানা বেগম জানান, এখানে রবি, সোম ও বুধবার গর্ভবতীদের চেকআপ করা হয়। বাকি তিন দিন সাধারণ রোগী দেখা হয়। আবার আউটডোরে রোগী দেখা শেষ করে ইনডোরে নরমাল ডেলিভেরি করতে হয়। চিকিৎসক স্বল্পতা একটি বড় সমস্যা বলে মনে করেন তিনি।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মোজাম্মেল হক জানান, নীলফামারী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র চার জন। কোনোভাবেই এতো কম সংখ্যক জনবল দিয়ে সেবা দেওয়া সম্ভব না। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জনবল নিয়োগের বিষয়টি জানানো হয়েছে।