হ্যাপি বাথডে ‘র‍্যাপগড’

Date:

Share post:

খারাপ সময়কে সম্বল করে নিজের প্রতিভা ও শক্তি প্রকাশের এক বড় উদাহরণ তিনি। সমাজ থেকে, পরিবার থেকে পরিত্যক্ত হয়েছেন। এক সময় বাস্তুহীন জীবনও কাটিয়েছেন, তিনিই এখন বিশ্বসেরা হিপহপ আর্টিস্ট। আজ যখন চারপাশের হাজার তরুণের প্রতিদিনের সঙ্গী হতাশা, তার গল্প আর গান চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় জীবনের সম্ভাবনাকে, সংগ্রামের সৌন্দর্যকে। তিনি ‘র‍্যাপগড’ এমিনেম। আজ হিপহপের এ বিশ্বখ্যাত তারকার ৫০তম জন্মদিন।

মার্শাল ব্রুস ম্যাথারস থ্রি ওরফে এমিনেম। জন্ম ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরিতে। তার শৈশব কেটেছে ভয়াবহ দারিদ্রে। মার্শাল যখন খুবই ছোট, তার বাবা তাদের ছেড়ে চলে যান। নিজেদের ঘর বলে কিছুই ছিল না। বিভিন্ন সরকারি আবাসন প্রকল্পে থাকতেন। মা ডেবরাহ ম্যাথারস নিজের মাদকাসক্তি নিয়েই হিমশিম খাচ্ছিলেন তখন।

ছোট্ট মার্শাল স্কুলেও সুবিধা করতে পারেননি। শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ায় ডানপিটে সহপাঠীদের সাথে কোনোভাবেই পেরে উঠতেন না। আর নাইনন্থ গ্রেডে তিনবার ফেলের পর পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ফেলেন। কিন্তু কমিক বই আর ভাষার প্রতি ভালোবাসা তাকে র‍্যাপ করতে আগ্রহী করে তোলে।

মাত্র ১৪ বছর বয়সে স্কুলের এক বন্ধুর সাথে র‍্যাপ করতে শুরু করেন মার্শাল। এমনকি প্রায়ই বিভিন্ন ‘ফ্রিস্টাইল র‍্যাপ ব্যাটল’ এ অংশ নিতেন ক্লাস ফাঁকি দিয়ে। বড় পরিসরের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে নিজের নামের আদ্যোক্ষর নিয়ে একটি ছদ্মনাম দিলেন, ‘এম অ্যান্ড এম’। এই ‘এম অ্যান্ড এম’-ই মুখে মুখে ফিরতে ফিরতে ‘এমিনেম’ হয়ে উঠে।

স্বাভাবিকভাবেই এক পর্যায়ে এমিনেমের জীবনেও প্রেম আসে। মেয়ে হেইলির জন্মের পর জীবন পরিবর্তনের আশায় টাকা জোগাড় করে প্রথম অ্যালবাম ‘ইনফিনিটি’ বের করেন। অ্যালবাম ব্যর্থ হলে হতাশায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু, ব্যর্থ হন। এরপর শোককে শক্তিতে পরিণত করতে আবারও বেছে নেন র‍্যাপ।

১৯৯৭ সালে র‍্যাপ অলিম্পিকস প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। কিন্তু সেখানে দ্বিতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাঁকে। প্রতিযোগিতায় হেরে গেলেও বিখ্যাত র‍্যাপার ডক্টর ড্রে’র নজরে পড়ে যান। তাঁর হাত ধরেই ২০০০ সালে দ্বিতীয় এলবাম ‘স্লিম শেডি এলপি’ প্রকাশ পায়। প্রায় ১৯ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয় এলবামের। সে বছরের গ্র্যামি এওয়ার্ড জিতে নেয় এলবামটি।

২০০২ সালে মুক্তি পায় তার ৩য় এলবাম ‘দ্য এমিনেম শো’। ২০০২ সালেই নাম লেখান অভিনয় জগতে, মুক্তি পায় তার সেমি বায়োগ্রাফি ‘এইট মাইল’। যে সিনেমা তাকে হলিউডের সর্বোচ্চ পুরস্কার অস্কার এনে দেয়। কিন্তু এ সিনেমায় কাজ করার সময় তিনি আবার ডুবে যান হতাশার জগতে। তখন অবশ্য স্যার এলটন জন তখন তাকে সাহায্য করেন। ২০০৮ সালে এমিনেম আবার ফিরে আসেন সংগীতের জগতে। তার প্রায় প্রতিটি অ্যালবাম বিলবোর্ড টপ চার্টের শীর্ষে ছিল দীর্ঘ সময় ধরে। মোট গ্র্যামির সংখ্যা ১৫টি।

জীবনভর যুদ্ধ করে উপরে ওঠার পর এমিনেম এখন বিশ্ব সংগীতের এক জীবন্ত কিংবদন্তি। তিনি এখন বিপর্যস্ত তরুণদের জন্য কাজ করেন, নিজস্ব দাতব্য সংস্থাও চালান। তার প্রতিটি গানেই পাওয়া যায় হাল না ছাড়ার অনুপ্রেরণা, যার সবটুকুই এসেছে তার নিজের জীবন থেকেই। হ্যাপি বার্থডে এমিনেম, দ্য র‍্যাপগড।