যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে কোনো পদে প্রার্থী ছিলেন না সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে নির্বাচনে তাঁর নামই বারবার ঘুরেফিরে আসছিল। তাঁর সমর্থন পাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিলেন রিপাবলিকান দলের প্রার্থীরা। অনেকের ধারণা ছিল, ট্রাম্পের নিরলস প্রচার অভিযানের ওপর ভিত্তি করে তাঁর দল এবার ‘রেড ওয়েভ’ বা লাল তরঙ্গের সৃষ্টি করবে। জনমত জরিপেও এমন ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে এগিয়ে আছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডেমোক্রেটিক পার্টি। বুধবার এ প্রতিবেদন লেখার সময় ১০০ আসনের সিনেটে ডেমোক্রেটিক পার্টি ৪৮টিতে জয় পেয়েছে। আরও তিনটিতে এগিয়ে আছে। রিপাবলিকানরা সিনেটে ৪৭ আসন পেয়েছেন। তবে নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে বা হাউসে তাঁরা এগিয়ে আছেন।
৪৩৫ আসনের প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানরা ১৯৭টিতে এগিয়ে আছেন। নিম্নকক্ষ ডেমোক্র্যাটদের হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও এখনও রিপাবলিকানদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার কোনো গ্যারান্টি নেই। ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছেন ১৭৮টি আসন। প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পেতে দরকার ২১৮টি আসন।
রিপাবলিকানরা কংগ্রেসের উভয়কক্ষ দখল করতে না পারায় যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে যতটা বিপন্ন মনে হয়েছিল, তা তিনি কাটিয়ে উঠতে যাচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মার্কিন নাগরিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেলেও তাতে জনমত তীব্রভাবে তাঁর বিপক্ষে যায়নি।
এবার সিনেটের ৩৫টি এবং হাউসের সব আসনে ভোট হয়েছে। পাশাপাশি এদিন ৩৬টি রাজ্যের গভর্নর পদেও ভোট হয়েছে। গভর্নর নির্বাচনের প্রাপ্ত ফলে রিপাবলিকানরা শুরুতে এগিয়ে থাকলেও ডেমোক্র্যাটরা ব্যবধান কমিয়ে আনছেন।
এ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সিনেটে দু’পক্ষের উভয়েরই ৫০টি করে আসন থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের টাই-ব্রেকিং ভোটের কারণে উচ্চকক্ষটির নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্র্যাটদের হাতেই ছিল। প্রতিনিধি পরিষদেও ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল।
প্রতিনিধি পরিষদ ডেমোক্র্যাটদের হাতছাড়া হয়ে গেলে মেয়াদের বাকি দুই বছর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। ডেমোক্র্যাটদের চাহিদা অনুযায়ী আইন পাসে বাধার মুখে পড়তে হবে তাঁকে। তবে এ নির্বাচনে রিপাবলিকানদের পক্ষে ‘লাল তরঙ্গ’ হওয়ার সম্ভাবনা ম্লান হয়ে গেছে।
রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান অ্যাডাম কিনজিঙ্গার টুইট করেছেন, ‘লাল তরঙ্গ ঘটছে না’। তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অন্যতম শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। কিন্তু এবার ভোটে লড়েননি।
এ নির্বাচনে সিনেটে জয় পেতে দুই দলেরই ভরসা ছিল পেনসিলভানিয়া। সেখানে অপ্রত্যাশিতভাবে রিপাবলিকান ওজ মেহমেতকে হারিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জন ফেটারম্যান জয়ী হয়েছেন। এই জয় ডেমোক্র্যাটদের কাছেও অনেকটা অপ্রত্যাশিত ছিল। মেহমেত জয়ী হলে তিনি হতেন দেশটির প্রথম মুসলিম সিনেটর। ট্রাম্পের প্রিয়পাত্র তিনি।
পেনসিলভানিয়ায় জয়ের ফলে ডেমোক্র্যাটদের জর্জিয়া, নেভাদা এবং অ্যারিজোনায় তিনটি আসনের মধ্যে দুটি ধরে রাখলেই হবে। তবে তিনটিতেই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন। বিপুলসংখ্যক ভোটার পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ায় নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল পেতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।
নির্বাচনে ‘দ্য স্কোয়াড’ নামে পরিচিত প্রতিবাদী কংগ্রেসওম্যান রাশিদা তালিব, আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ, আয়না প্রেসলে, কোরি বুশ এবং ইলহান ওমরও প্রতিনিধি পরিষদে পুনরায় জয়ী হয়েছেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, তাতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক এখন যে রকম তলানিতে ঠেকে আছে, সে রকমই থাকবে বলে মনে করছে রাশিয়া। ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলার কারণে ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক এখন এতটাই খারাপ যে দুই দেশের সম্পর্ক কখনও এমন তলানিতে ঠেকেনি। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এ কথা বলেছেন।