কুড়িয়ে পাওয়া লাখ টাকা ফেরত দিলেন রিকশাচালক

Date:

Share post:

সারাদিন রিকশা চালাই। দুই ছেলে হোটেলে কাজ করে আর একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। এখন স্বামী-স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে চার জনের সংসার। আগে গ্রামে অন্যের জমিতে কাজ করতাম। সেখানে তেমন আয় রোজকার হতো না। তাই পরিবার নিয়ে শহরে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছি। গরীব মানুষ পরিশ্রম করে জীবীকা নির্বাহ করছি। অন্যের টাকা-পয়সার দিকে কোন লোভ-লালসা নেই। কথাগুলো বলছিলেন, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের শাসলা পিয়ালা এলাকার মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আব্দুল গফুর।

১ লাখ টাকা কুড়িয়ে পেয়ে টাকার প্রকৃত মালিককে ফেরত দিয়ে সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের দরিদ্র রিকশাচালক আব্দুল গফুর (৫৫)। গত ৩১ মে ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর মহাসড়কের জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় ১ লাখ টাকা কুড়িয়ে পান আব্দুল গফুর। পরে পুলিশের মাধ্যমে সেই টাকার প্রকৃত মালিকের হতে তুলে দিয়েছেন তিনি।

আব্দুল গফুর বলেন, ওই দিন আমি সকালে মহাসড়কের টার্মিনাল এলাকায় রিকশা নিয়ে ফিরে আসার সময় রাস্তার উত্তর পাশে একটি টাকার বান্ডিল দেখতে পাই। সেই টাকা পাওয়ার পরে প্রকৃত মালিককে খুঁজতে থাকি। এক পর্যায়ে টাকার প্রকৃত মালিক এলে থানা পুলিশের মাধ্যমে টাকাটা হস্তান্তর করি। কিন্তু সেই টাকা পাওয়ার পরে এক ব্যাক্তি আমার কাছ থেকে টাকাটা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। আশপাশে লোকজন আসার কারণে সফল হতে পারেনি।

তিনি আরও জানান, টাকার প্রকৃত মালিক আমাকে কিছু টাকা বকশিস হিসেবে দিতে চেয়েছিল কিন্তু আমি তা নিতে রাজি হয়নি। আমি তাকে বলেছি লোভ থাকলে সব টাকা রেখে দিতাম। সারাদিনে যে ভাড়া পেতাম সেই টাকাটুকু চেয়েছি। কারণ সকালে টাকা পাওয়ার পরে প্রকৃত মালিকের হাতে টাকা পৌঁছাতে বিকেল হয়ে গেছে। কিন্তু তিনি আমাকে জোরপূর্বক ২ হাজার টাকা দেন। সেই দুই হাজার টাকা রেখে দিয়েছি।

টাকার প্রকৃত মালিক রেজাউল ইসলাম বলেন, ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে ফেরার পথে রাস্তায় পড়ে যায়। আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখি টাকাটা আমার পকেটে নেই। তারপর শুনলাম একজন রিকশাচালক পেয়েছেন। পরে আমি এসে কিছু প্রমাণ দিলাম। আর আমার টাকা আমাকে ফেরত দেওয়া হলো। আমি ভাবতে পারিনি যে টাকাটা ফেরত পাব। আমি সেই রিকশাচালক ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ। আব্দুল গফুর ভাইয়ের সম্পদ না থাকলেও তিনি একজন বড় মনের মানুষ।

ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামুন বলেন, আব্দুল গফুর একজন রিকশাচালক। তিনি রংপুর-ঠাকুরগাঁও মহাসড়কে রিকশা চালানোর সময় এক লাখ টাকা কুড়িয়ে পান। পরে ওই টাকা উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে প্রকৃত মালিক নিয়ে যান।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো: সামসুজ্জামান জানান, আব্দুল গফুরের মত একজন মানুষ ১ লাখ টাকা কুড়িয়ে পাওয়া পরেও সেই টাকা নিজে খরচ না করে টাকা তার প্রকৃত মালিকের কাছে ফেরত দিয়েছে। এটা আমাদের সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত। শুনেছি তার থাকার নিজস্ব জায়গা বা ঘর নেই। তাকে সরকারি ঘর দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।